24 Nov 2024, 08:33 am

ঝিনাইদহের সাবেক জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোকছেদুল ইসলামের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

স্টাফ রিপোর্টার : ঝিনাইদহের সাবেক জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. মোকছেদুল ইসলামের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত বিপুল সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

গত ৪ জুলাই বৃহস্পতিবার সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঝিনাইদহের উপ-পরিচালক মো. শফি উল্লাহ বাদী হয়ে এজাহার দায়ের করেন। পরে একই দপ্তরের সহকারী পরিচালক আসাদুজ্জামান এজাহারটি মামলা হিসাবে নেন। এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ঝিনাইদহের মহেশপুরের পীরগাছা গ্রামের মৃত কিতাব আলীর ছেলে মোকছেদুল বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের অবসরপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক। তিনি ঝিনাইদহের জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ২৭ লাখ ৭২ হাজার ১৪২ টাকার সম্পদ অর্জনের হিসাব গোপন করে দুদকে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন তিনি। এছাড়াও জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ৩৫ লাখ ৪০ হাজার ৬৬০ টাকা অসাধু উপায়ে অর্জন করেছেন। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে দুদকের তৎকালীন সমন্বিত জেলা কার্যালয় যশোর মোকছেদুলের ধনসম্পদের খোঁজে অনুসন্ধানে নামে। অনুসন্ধানে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়।

সূত্র জানায়, ঝিনাইদহে চাকরিকালীন এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় নিয়োগ বাণিজ্যসহ মোকছেদুলের বিরুদ্ধে আরও অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে।

ঝিনাইদহ জেলা শহরের  ফায়ার সার্ভিস অফিসের সামনের পুকুরের পশ্চিম পাশ্র্বের কোটি টাকা মূল্যের  আলিশান বাড়িতে বসবাস করেন তিনি। তার নিজ নামে ও স্ত্রীর নামে নীজ গ্রাম পীরগাছা ও আশে-পাশের গ্রামে প্রায় ১ শত বিঘা জমি ক্রয় করেছেন।

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্যমতে, তদন্তে আরও কারও সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে এ মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

উল্লেখিত সাবেক জেলা শিক্ষা অফিসারের দুর্ণীতির বিরুদ্ধে গত ৯ ফেব্রুয়ারী/ ২০১৪ তারিখে ঝিনােইদহের মহেশপুর শহর থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক সীমান্তবাণীতে “আলাদিনের আশ্চার্য চেরাগ হাতে পেয়েছেন ঝিনাইদহ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার নিজের পৈত্রিক বাস্ত ভিটা না থাকলেও তিনি এখন ঝিনাইদহ শহরে চারতলা বাড়িসহ শত বিঘা জমির মালিক” শিরোনামে একটি বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদটিতে উল্লেখ করা হয়- ‘সরকারী চাকুরীটাকে কি বলবেন? আলাদিনের আশ্চার্য চেরাগ? না সোনার ডিম পাড়া হাঁস? প্রথমটা বললেই যেনো মানানসই হয়।
ঝিনাইদহ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মকছেদুল ইসলামের শুরুতে বসবাস করার মতো পৈত্রিক বাস্ত ভিটাও ছিল না। বসবাস করতেন অন্যের জমিতে। লেখাপড়া শেষ করে সরকারী চাকুরীতে যোগ দিয়ে কিছু দিনের মধ্যেই তিনি অবৈধভাবে কাড়ি কাড়ি টাকা উপার্জনের পথ খুজে পান। আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। আলাদিনের আশ্চার্য চেরাগে তিনি যখনই ঘর্ষন করেছেন বেরিয়ে এসেছে বস্তা বস্তা টাকা। চাকুরীতো নয় যেনো টাকা ছাপানোর মেশিন। বাস্ত ভিটাতো দুরের কথা তিনি এখন শত বিঘা জমির মালিক। নামে বে-নামে কিনেছেন ঐসব সম্পত্তি। ১৯৮০ সাল থেকে তিনি জমি ক্রয় শুরু করেছেন। শুধু তাই নয় ঝিনাইদহ শহরের ফায়র সার্ভিস অফিসের পশ্চিম পার্শ্বের পুকুরের পশ্চিম পাড়ে তুলেছেন ৩ কোটি টাকা মূল্যের একটি ৪ তলা বিশাল বিল্ডিং। এছাড়াও ব্যাংকে নিজ নামে ও স্ত্রী মিসেস কামরুন্নাহারের নামে রয়েছে লক্ষ লক্ষ টাকা। সবই হয়েছে চাকুরীর বদৌলতে।
উল্লেখিত জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মকছেদুল ইসলামের জন্মস্থান মহেশপুর উপজেলার পীরগাছা গ্রামে। তার পিতার নাম মোঃ কিতাব আলী। তিনি চাকুরীতে যোগদানের পর ১৯৮০ সাল থেকে এ পর্যন্ত মহেশপুর উপজেলার পান্তাপাড়া ইউনিয়নের পান্তাপাড়া, পীরগাছা ও রঘুনাথপুর মৌজাসহ বেশ কয়েকটি মৌজায় নিজ নামে ও স্ত্রীর নামে প্রায় শত বিঘা জমি ক্রয় করেছেন। তিনি ২০০০ সালে জীবননগর উপজেলা পরিষদের বাউন্ডরী প্রাচীরের উত্তর পার্শ্বে প্রায় কোটি টাকা মূল্যে প্রায় ২০ শতক জমি ক্রয় করেছেন। জনৈক ব্যাক্তি ঐ জমি ভাড়া নিয়ে সেখানে প্রভাতী কিন্ডার গার্টেন নামের একটি স্কুল চালাচ্ছে।
তিনি গত বছর নভেম্বর মাসে হুসোরখালীর বাগানপাড়ার মাওলা বক্সের পুত্র আব্দুল মান্নানের স্ত্রী কোহিনুরের নিকট থেকে ৭ লক্ষ টাকায় ১ বিঘা জমি ক্রয় করেছেন। গত ২০১৩ সালে তিনি সর্বমোট প্রায় ৫০ লক্ষ টাকার জমি ক্রয় করেছেন এবং পীরগাছা মৌজায় আগে ক্রয় করা জমিতে ৪টি পুকুর খনন করেছেন। যশোর শহরেও তার নিজ নামে ও স্ত্রীর নামে জমি রয়েছে।
এ পর্যন্ত তিনি নিজ নামে ও স্ত্রীর নামে মহেশপুর উপজেলায় যে সব জমি ক্রয় করেছেন সে দলিলগুলোর লেখক মহেশপুর সাব- রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক মোঃ সিরাজুল ইসলাম ও মোঃ আবুল বাশার।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি উক্ত দু’জন লেখকের নিকট দলিলের নম্বর খোঁজ করেন তবে সহজেই পেয়ে যাবেন।
উল্লেখিত ঝিনাইদহ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মকছেদুল ইসলামের বিরুদ্ধে অবৈধ অর্জনের বিষয়ে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দূর্ণীতি দমন কমিশনের মাননীয় চেয়ারম্যানের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করা হচ্ছে।’

উল্লেখিত শিরোনামে সংবাদটি প্রকাশের পর এবং আরও কিছু অভিযোগের পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তৎকালীন ঝিনাইদহ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মকছেদুল ইসলামের বিরুদ্ধে খোঁজ-খবর নিলে অভিযোগের সত্যতা পেলে দুদকের কর্মকর্তারা তদন্ত শেষে দুদকের ঢাকাস্থ প্রধান কার্যালয়ে তার বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করলে সম্প্রতি মামলার অনুমতি আসলে ঝিনাইদহের সমন্বিত কার্যালয়ের  উপ-পরিচালক মো. শফি উল্লাহ বাদী হয়ে দুদক আইন, ২০০৪ এর ২৬(২) ও ২৭(১) ধারায় এজাহার দায়ের করেন। পরে একই দপ্তরের সহকারী পরিচালক আসাদুজ্জামান এজাহারটি মামলা হিসাবে গ্রহণ করেন।।

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 12491
  • Total Visits: 1287764
  • Total Visitors: 4
  • Total Countries: 1668

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ রবিবার, ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
  • ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (হেমন্তকাল)
  • ২১শে জমাদিউল-আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, সকাল ৮:৩৩

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
    123
252627282930 
       
15161718192021
293031    
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018